শীতকাল আসার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর বাড়তি যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। ঠাণ্ডা আবহাওয়া শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তাই এ কারণে কারণ তারা সহজেই ঠাণ্ডা, কাশি, এবং অন্যান্য শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের ত্বকও এই সময়ে শুষ্ক হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাই শীতে শিশুর সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শীতে শিশুরা সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক ও ধুলাবালি থাকার কারণেই মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টা অভিভাবকদের কিছুটা সচেতন থাকতে হবে এবং শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিতে হবে। এই নিবন্ধে শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

শীতে শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার উপায়
১. শিশুর পোশাক নির্বাচন
শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন শীতের সময় শিশুকে পর্যাপ্ত উষ্ণ রাখার জন্য সঠিক পোশাক পরানো প্রয়োজন।
- লেয়ারিং: শিশুকে একাধিক স্তরের কাপড় পরান, যাতে শীত বেশি অনুভূত হলে কিছু কাপড় খুলে রাখা যায়।
- উষ্ণ পোশাক: গরম জামা, উলের সোয়েটার, মোজা, মাফলার এবং টুপি পরানো উচিত। টুপিটি শিশুর কান ঢেকে রাখবে, কারণ কান দিয়ে সহজে ঠাণ্ডা প্রবেশ করে।
- নরম এবং আরামদায়ক কাপড় ব্যবহার করুন, যাতে শিশুর ত্বকে অস্বস্তি না হয়।
২. শিশুর ঘর উষ্ণ রাখা:
অবশ্যই আমাদের শিশুদের শীতে একটু বাড়তি যত্ন নিতে হবে, কারণ এই সময় ঠান্ডার সমস্যা শিশুদের বেশি থাকে, শিশুদের হালকা কুসুম গরম পানি পান ও ব্যবহার করানো উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দাঁত ব্রাশ করা, হাত-মুখ ধোয়া, খাওয়াসহ শিশুদের নানা কাজে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে এ সময় শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবে। শীতেও শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তবে গোসলের সময় শরীরের কাছাকাছি তাপমাত্রার হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। তবে নবজাতক কিংবা ঠাণ্ডার সমস্যা আছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দেয়া যেতে পারে। অনেকেই শিশুকে জবজবে করে সরিষার তেল মাখিয়ে গোসল করিয়ে থাকেন। এতে গোসল শেষেও শিশুর চুল ভেজা থাকে এবং ঠাণ্ডা লাগে। শীতে শিশুর বাড়তি যত্নের মধ্যে গোসল হচ্ছে অন্যতম,গোসলের আগে আমরা অলিভ অয়েল অথবা এলমন অয়েল ব্যবহার করতে পারি,গোসলের পানি হবে কুসুম গরম, প্রথমে শরীর ধুয়ে তারপর মাথায় পানি দিতে হবে এবং মাথাটা ভালো করে মুছে দিতে হবে।প্রতিদিন একই সময় গোসল করাতে হবে, হালকা রোদে বসে গোসল করানো ভালো,তবে যেখানে বেশি বাতাস আছে ওখানে বসে গোসল না করানোই ভালো এতে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
- হিটার বা ব্লোয়ার ব্যবহার করুন, তবে তা সরাসরি শিশুর মুখে লাগাবেন না।
- শিশুর ঘরে আর্দ্রতা বজায় রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বক এবং শ্বাসতন্ত্রকে শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করবে এবং শিশুর বাড়তি যত্ন নিন।
- ঘরের জানালা বা দরজা দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকতে না দেয়ার ব্যবস্থা করুন।
৩. পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য:
শীতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস জরুরি।
- শিশুকে এমন খাবার দিন যাতে ভিটামিন সি বেশি থাকে, যেমন কমলা, লেবু, আমলকি ইত্যাদি। এটি ঠাণ্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
- গরম দুধ এবং বাদাম শিশুকে উষ্ণতা দেয় এবং শক্তি বাড়ায়।
- শীতকালে গরম স্যুপ বা স্টিউ দিতে পারেন, যা শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।
- শিশু যদি বুকের দুধ পান করে, তবে তাকে নিয়মিত দুধ পান করান। এবং শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
শিশুর ত্বকের যত্ন:
শীতকালে শিশুর ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যায়। তাই এ সময় ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
১. ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করা
- শিশুকে গোসল করানোর পর তৎক্ষণাৎ বেবি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- মাল্টিপারপাস ক্রীম বা বেবি লোশন ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সহায়ক।
- দিনে একাধিকবার ত্বক ময়েশ্চারাইজ করুন, বিশেষ করে হাত, পা এবং মুখে।
২. উপযুক্ত সাবান ও শ্যাম্পু নির্বাচন
- শীতকালে শিশুর জন্য মাইল্ড বা ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার করুন।
- খুব বেশি সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি ত্বককে আরও শুষ্ক করতে পারে তাই শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিন।
৩. গোসলের নিয়ম
- শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানো প্রয়োজন নেই।
- গরম পানি ব্যবহার করুন, তবে পানি যেন খুব বেশি গরম না হয়।
- গোসলের সময়ের পরিমাণ কম রাখুন।
৪. ত্বকের সমস্যা প্রতিরোধ
- শীতে ঠোঁট ফাটার সমস্যা খুব সাধারণ। তাই শিশুর ঠোঁটে লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন।শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন
- ত্বকে লালচে বা ফাটা দাগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিন
ঠাণ্ডা ও কাশির প্রতিরোধ ও যত্ন
১. ঠাণ্ডা প্রতিরোধে সাবধানতা
- শিশুকে বাইরে নিয়ে গেলে সবসময় গরম পোশাক পরিয়ে রাখুন।
- খুব বেশি ঠাণ্ডা থাকলে শিশুকে ঘরে রাখার চেষ্টা করুন।
- শিশুর চারপাশ পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখুন এবং শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিন।
২. ঠাণ্ডা হলে ঘরোয়া যত্ন
- গরম পানির ভাপ: দেওয়া শিশুর সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করে।
- শিশুকে গরম পানির স্যুপ বা ভেষজ চা দিন (যদি সে বড় হয়)।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শ
- যদি শিশুর ঠাণ্ডা, কাশি বা শ্বাসকষ্ট বেশি দিন ধরে থাকে, তবে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ঘরের পরিবেশ এবং শিশুর সুস্থতা
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
- শিশুর বিছানার চাদর, বালিশের কাভার এবং জামাকাপড় পরিষ্কার এবং শুকনো রাখুন।
- শীতের সময় শিশু যেন ময়লা জিনিসে হাত না দেয় বা মুখে না দেয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
২. সঠিক ঘুমের পরিবেশ:
- শিশুর ঘুমের জন্য উষ্ণ এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন এবং শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিন।
- ঘুমানোর সময় শিশুর গায়ে চাদর বা কম্বল ভালোভাবে জড়িয়ে দিন এবং শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিন।
৩. আর্দ্রতা বজায় রাখা
- শীতকালে ঘরের আর্দ্রতা শুষ্ক হয়ে যায়, যা শিশুর শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।
শিশুর মনোরঞ্জন এবং শারীরিক কার্যকলাপ
১. ঘরে খেলার আয়োজন:
শীতের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শিশুকে বাইরে খেলার চেয়ে ঘরে খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করুন।
- খেলনা দিয়ে শিশুর মনোযোগ আকর্ষণ করুন।
- ঘরের ভেতর এমন পরিবেশ তৈরি করুন, যেখানে সে আনন্দ নিয়ে সময় কাটাতে পারে।
২. শরীরচর্চা
শিশুকে সামান্য হাঁটাচলা বা খেলাধুলায় উৎসাহিত করুন । এটি তার রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখতে সাহায্য করবে এবং শরীর গরম রাখবে এবং শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন নিলে মানসিক বিকাশ ঘটে।
শিশুর মানসিক যত্ন:
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও জরুরি।
- শিশুর সঙ্গে সময় কাটান এবং তাকে গল্প বলুন বা গান শোনান।
- নতুন কিছু শেখানোর চেষ্টা করুন, যেমন ছবি আঁকা বা বই পড়া।
- শিশুকে সবসময় উষ্ণতা এবং আরামদায়ক পরিবেশ দিন।
শীতকালীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- শিশুর ত্বকে সরাসরি কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার করবেন না।
- শিশুকে শীতের দিনে খুব বেশি খোলা রোদে রাখার চেষ্টা করুন, কারণ এতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
- শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করান। শীতে পানি কম খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে।
- বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন এবং বাড়ির তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার দিন।
উপসংহার:
শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন তার শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য শিশুর মুখে এবং সারা শরীরে বেবি লোশন, বেবি অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন।অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। শিশুর প্রতি মনোযোগী হয়ে তার শারীরিক এবং মানসিক চাহিদা পূরণ করলে সে শীতকাল আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করতে পারবে। শীতে শিশুর বাড়তি যত্ন সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য পেতে ভিজিট করুন